হাফেজ মুহাম্মদ আবুল মঞ্জুর:
টেকনাফ থেকে দিনাজপুরসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আগত লাখো শোকার্ত তৌহিদী জনতার অংশগ্রহণে অনুষ্ঠিত হয়েছে আল-জামিয়া আল-ইসলামিয়া পটিয়ার মুহতামিম ও শায়খুল হাদীস, আঞ্জুমানে ইত্তেহাদুল মাদারিস বাংলাদেশ’র সেক্রেটারি জেনারেল, বাংলাদেশ নেজামে ইসলাম পার্টির উপদেষ্টা আল্লামা মুফতী আবদুল হালিম বোখারী রহ. এর নামাযে জানাযা। ২১জুন ( মঙ্গলবার) রাত দশটায় অনুষ্ঠিত নামাযে জানাযায় দেশের শীর্ষ আলেম-ওলামা, অসংখ্য মাদ্রাসার পরিচালক, শিক্ষক-ছাত্র, বিভিন্ন রাজনৈতিক- অরাজনৈতিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ, জনপ্রতিনিধিবৃন্দ, সরকারি-বেসরকারি কর্মকর্তাগণসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে শোকাহত তৌহিদী জনতা নামাযে জানাযায় অংশ নেন।
দেশের শীর্ষ এ আলেমেদ্বীনের ইন্তেকালের খবর ছড়িয়ে পড়লে নামাযে জানাযায় শরীক হতে দেশের নানা প্রান্ত থেকে পটিয়া অভিমুখী মানুষের ঢল নামে। নির্ধারিত সময়ের আগেই লোকে লোকারণ্য হয়ে যায় পুরো পটিয়া। জামিয়া ইসলামিয়া পটিয়ার বিশাল ময়দান, প্রতিটি বিল্ডিং, ছাদ, ফাঁকা জায়গা কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে বাইরেও দীর্ঘ এলাকাজুড়ে ছড়িয়ে যায় জনস্রোত। এভাবে লাখো শোকার্ত তৌহিদী জনতার স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহনে এটি হয়ে উঠে স্মরণকালের বিশাল নামাযে জানাযা।
এ নামাযে জানাযায় ইমামতি করেন, আল-জামিয়া আল- ইসলামিয়া পটিয়ার প্রধান মুফতী ও শায়খুল হাদিস আল্লামা মুফতী হাফেজ আহমদ উল্লাহ। তিনি জানাযার নামাযের পূর্বে সংক্ষিপ্ত বক্তব্যও রাখেন। এছাড়াও সংক্ষিপ্ত বক্তব্য রাখেন, জামিয়ার ভারপ্রাপ্ত মুহতামিম আল্লামা ওবায়দুল্লাহ হামযাহ ও মরহুমের বড় ছেল মাওলানা রেজাউল করীম বোখারী।
নামাযে জানাযা শেষে ‘মাকবারায়ে আযীযী’তে জামিয়ার সাবেক মুহতামিম আল্লামা নূরুল ইসলাম কদীম রহ. এর পার্শ্বে মরহুমকে দাফন করা হয়।
উল্লেখ্য, বহুমুখী প্রতিভাধর, বিদগ্ধ আলেমেদ্বীন আল্লামা মুৃফতি আব্দুল হালিম বোখারী রহ.
২০০৩ সাল থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত জামিয়া ইসলামিয়া পটিয়ার সহকারী পরিচালকের দায়িত্ব পালন করেন। অতঃপর ৩০ অক্টোবর’০৮ইং থেকে তিনি অত্যন্ত সুনাম ও সুনিপুণ দক্ষতার সাথে জামিয়া প্রধানের দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন। তিনি জামিয়া ইসলামিয়া পটিয়ার প্রাণপুরুষ হিসেবে কর্তব্যনিষ্ঠার সাথে দায়িত্ব পালনের সাথে সাথে দেশের বহু মাদ্রাসার পরিচালক, সদরে মুহতামিম ও মজলিসে শুরার সভাপতি হিসেবেও ইসলামী শিক্ষাঙ্গনে অভিভাবকত্বের মহৎ খেদমতে নিবেদিত ছিলেন।
তিনি দ্বীন-ঈমানের প্রয়োজনে মাদ্রাসার দরসে-তাদরীস ছাড়াও তিনি মাঠে-ময়দানেও প্রত্যক্ষ, পরোক্ষভাবে বুদ্ধিদীপ্ত, সাহসী ভূমিকা পালন করে গিয়েছেন।উপমহাদেশের প্রখ্যাত ইসলামী রাজনীতিবিদ ও তুখোড় পার্লামেন্টারিয়ান খতীবে আযম আল্লামা ছিদ্দিক আহমদ রহ. এর ঘনিষ্ঠ রাজনৈতিক শিষ্য হিসেবে নিজেকে পরিচয় দিতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করতেন। আজীবন তিনি আকবিরে দেওবন্দের হাতে গড়া ঐতিহ্যবাহী ইসলামী রাজনৈতিক দল বাংলাদেশ নেজামে ইসলাম পার্টির সাথে আন্তরিকভাবে সম্পৃক্ত ছিলেন। নেজামে ইসলাম পার্টর মনোনীত প্রার্থী হিসেবে তিনি ১৯৯৬ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সাতকানিয়া-লোহাঘাড়া আসনে মিনার প্রতীক নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। আমৃত্যু তিনি প্রাচীন এ সংগঠনের কেন্দ্রীয় উপদেষ্টা পদে অভিষিক্ত ছিলেন।
এছাড়াও তিনি ছিলেন, বাংলাদেশ তাহফিজুল কুরআন সংস্থা ও ইসলামী সম্মেলন সংস্থা বাংলাদেশ’র সভাপতি, আল হাইআতুল উলয়া বাংলাদেশ’র স্থায়ী কমিটির সদস্য, শাহজালাল ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেড এর সুপারভাইজারী কমিটির চেয়ারম্যান, আল-জামিয়া আল-ইসলামিয়া পটিয়া থেকে প্রকাশিত মাসিক আত্-তাওহীদের প্রধান সম্পাদক। তিনি বিভিন্ন বিষয়ে আরবি, উর্দু ও বাংলা ভাষায় বেশ কিছু কিতাবাদিও রচনা করেছেন।
প্রাজ্ঞ হাদিস বিশারদ ও সর্বজন শ্রদ্ধেয় ইসলামী ব্যক্তিত্ব আল্লামা মুফতি আব্দুল হালিম বোখারী রহ. ২১ জুন ( মঙ্গলবার), সকাল ১০ টায় ইন্তেকাল করেন-ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন। গত ১৯ শে জুন বাদ মাগরিব এজমাজনিত কারণে শ্বাসকষ্ট বেড়ে গেলে চট্টগ্রাম বিশেষায়িত হসপিটাল সি এস সিআরে তাঁকে ভর্তি করানো হয়। পরবর্তীতে অবস্থার অবনতি হলে আইসিইউতে নেয়া হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আল্লাহর ডাকে সাড়া দিয়ে ক্ষণস্থায়ী পৃথিবী থেকে চিরবিদায় নেন। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৭৭ বছর। তিনি স্ত্রী, ৪ ছেলে, ৩ মেয়েসহ অসংখ্য ভক্ত-অনুরক্ত ও গুণগাহী রেখে যান।
তাওহিদী জনতার দরদী অভিভাবক, দেশের এই শীর্ষ আলেমেদ্বীনের ইন্তেকালে দেশজুড়ে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। গভীর শোক প্রকাশ করে বিবৃতি দিয়েছেন, বিভিন্ন সংগঠনের নেতৃবৃন্দ ও বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ।
শোক বার্তায় তাঁরা বলেন, আল্লামা মুফতি আব্দুল হালিম বোখারী রহ. ছিলেন, বহুমুখী প্রতিভাধর একজন চৌকস ইসলামী ব্যক্তিত্ব। একাধারে একজন প্রখ্যাত মুফাসসিরে কুরআন, প্রাজ্ঞ হাদিস বিশারদ, বিশিষ্ট ফকীহ হিসেবে বিজ্ঞ মহলে তিনি ব্যাপকভাবে সমাদৃত।ইলমে নবভী স. এর দরসে-তাদরীসের খেদমতে আমৃত্যু নিবেদিত থেকে তিনি যে অসামান্য অবদান রেখে গিয়েছেন তা চিরঅম্লান হয়ে থাকবে। সর্বোপরি দেশ ও উম্মাহর যে কোন দুঃসময়ে তিনি ছিলেন একজন দরদী অভিভাবক ও চৌকস কাণ্ডারি। জীবন সায়াহ্নকাল পর্যন্ত শিরক–বিদআত এবং খোদাদ্রোহী অপশক্তির বিরুদ্ধে তিনি সোচ্চার ছিলেন।
দেশের শীর্ষ এ আলেমেদ্বীন ও দূরদর্শী রাহবারের ইন্তেকালে জাতি হারালো একজন চৌকস দ্বীনি অভিভাবক। আমরা আল্লাহর দরবারে মরহুমের রুহের মাগফিরাত কামনা করি এবং শোকাহত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানাই।